সোজা কথা প্রতিবেদক: কখনো তিনি অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা। কখনোবা প্রধানমন্ত্রীর সাবেক এপিএস (সহকারী একান্ত সচিব)। কোথাও তিনি সচিব। কোথাও গোয়েন্দা সংস্থার ঘনিষ্ঠ। আবার অনেকের কাছে তিনি মিডিয়া ব্যক্তিত্ব। কখনো তিনি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। এমন একাধিক নাম ও পরিচয়ের আড়ালে ‘সুশীল সমাজের’ মানুষ বনে যাওয়া এই প্রতারক মো. সাহেদই আলোচিত রিজেন্ট হাসপাতাল ও রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান। একসময় মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) ব্যবসা করে গ্রাহকের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছিলেন। প্রতারণা মামলায় জেলও খেটেছিলেন। অন্তত দুই ডজন মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
জাতীয় পরিচয়পত্রে তার নাম সাহেদ করিম থাকলেও কারাগার থেকে বেরিয়েই হয়ে যান মো. সাহেদ। আগে কারো কাছে তিনি ছিলেন মেজর ইফতেখার করিম। কারো কাছে পরিচয় দেন লে. কর্নেল মুহাম্মদ শহীদ নামে।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সারোয়ার বিন কাশেম জানান, অভিযোগ পাওয়ার পর তারা বেশ কয়েকদিন ধরে গোয়েন্দা নজরদারি করে আসছিলেন রিজেন্ট হাসপাতালে। সেখানে করোনাভাইরাসের পরীক্ষা নিয়ে তারা জালিয়াতি করে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিলেন। রিজেন্টের মালিকসহ অন্যদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তাকে গ্রেফতারের জন্য অভিযান চালানো হচ্ছে।
র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. সাহেদের গাড়িতে ফ্ল্যাগস্ট্যান্ড ও স্বাস্থ্য অধিপ্তরের স্টিকার লাগানো ছিল। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোকজনের চোখে ধুলো দিতেই ফ্ল্যাগস্ট্যান্ড ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের স্টিকার ব্যবহার করা হতো।’
সাতক্ষীরার সিরাজুল বরিমের ছেলে সাহেদ নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান হয়েও কয়েক বছরেই হয়েছেন কোটি কোটি টাকার মালিক। তার বিরুদ্ধে ধানমণ্ডি থানায় দুটি, বরিশালে একটি, উত্তরা থানায় আটটিসহ রাজধানীতে ৩২টি মামলা রয়েছে। ২০০৯ সালের জুলাই মাসে প্রতারণার মামলায় তাকে একবার গ্রেপ্তার করা হয়। তখন কয়েক মাস জেলে ছিলেন তিনি। মার্কেন্টাইল কো-অপারেটিভ ব্যাংক লিমিটেড থেকে ছয় কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার নথিতে নিজেকে অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল মুহাম্মদ শহীদ বলে পরিচয় দেন তিনি। এ বিষয়ে আদালতে দুটি মামলা চলছে এখনো। তদন্ত করে তার ভুয়া পরিচয়ের বিষয়টি নিশ্চিত হন সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত চার-পাঁচ বছর ধরে নিজেকে কথিত বুদ্ধিজীবী বা রাজনৈতিক বিশ্লেষক হিসেবে পরিচয় দিতেন তিনি। সেন্টার ফর পলিটিক্যাল রিসার্চ বা রাজনীতি গবেষণা কেন্দ্র নামে একটি প্রতিষ্ঠানও চালাতেন তিনি। এজন্য গাঁটের টাকা খরচ করে বিভিন্ন টক শো’তে অংশ নিতেন বলেও জানা গেছে।
টক শো’তে বিরোধী রাজনীতিকদের বিষয়ে বেশি বেশি সমালোচনা করা সাহেদের বিরুদ্ধে একসময় বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার কথাও শোনা গেছে। সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে সুবিধা আদায়ের জন্য ‘নতুন কাগজ’ নামে একটি নামসর্বস্ব পত্রিকাও খুলেছেন তিনি। নিজেকে সেই পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক হিসেবে পরিচয় দিতেন তিনি। এসবই ছিল তার বিভিন্ন অপকর্ম থেকে নিজেকে বাঁচানোর ঢাল।
উল্লেখ্য, গত সোমবার র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলমের নেতৃত্বে রিজেন্ট হাসপাতালের উত্তরা ও মিরপুর কার্যালয়ে অভিযান চালানো হয়। পরীক্ষা ছাড়াই করোনার সনদ দিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা ও অর্থ হাতিয়ে নিয়ে আসছিল তারা। র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত অন্তত ছয় হাজার ভুয়া করোনা পরীক্ষার সনদ পাওয়ার প্রমাণ পায়। একদিন পর গত মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্দেশে র্যাব রিজেন্ট হাসপাতাল ও তার মূল কার্যালয় সিলগালা করে দেয়। রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান সাহেদসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে উত্তরা পশ্চিম থানায় নিয়মিত মামলা করা হয়েছে।