(প্রাক কথন: আইন ও সালিশ কেন্দ্রের ২০০৯ সালের ডিসেম্বর ত্রৈমাসিক বুলেটিনে নীচের লেখাটি ছাপা হয়। প্রায় ১১ বছর আগে ছাপা এ লেখাটির মাধ্যমে পাঠকবৃন্দ সে সময়কার পরিস্থিতি সম্পর্কে একটি ধারণা পাবেন। সে সময়কার পরিস্থিতি দিনে দিনে উন্নতি তো হয়নি বরং সময়ে কোথায় গিয়ে ঠেকেছে তা সহজেই দৃশ্যমান)
এ এক অদ্ভুত সাদৃশ্য। অস্বাভাবিক রকমের অনুকরণ। সমস্যার মূলে না গিয়ে অতি সহজ পথে সন্ত্রাসের মতো মহা দুষ্টক্ষতের জন্য কী সরল সমাধান। ক্রসফায়ার, বন্দুকযুদ্ধ, কখনো–বা এনকাউন্টার। তারপর ক্ষমতাধর কর্তাদের আত্মরক্ষার দোহাই। এলিট ফোর্স, র্যাব, থানা পুলিশ, এমনকি আনসারের হাতেও কথিত সন্ত্রাসী মারা পড়ছে। একই বৈচিত্র্যহীন গল্পের পুনরাবৃত্তিতে মানুষ অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে। এসব মৃত্যুর পুরো সংবাদ আজকাল আর কেউ পড়ছেন না। পুরো বিষয়টা ওপেন সিক্রেট। এসব বলতে মানুষ এখন বিশেষ ধরনের হত্যাকাণ্ডকেই বোঝে। কখনো কখনো বেশ হৈচৈ পড়ে যায়। যখন বাপ্পীর মতো চাকরিপ্রত্যাশী যুবককে মেরে ফেলা হয়, সোর্স নামধারীদের (সাধারণত প্রাক্তন ক্রিমিনাল!) ভুল তথ্যে। এর আগে বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরীহ শিক্ষার্থীকে ‘গাল কাটা মাসুম’ বলে হত্যা করেছিল ডিবি পুলিশ। তখনও একই রকম হৈচৈ হয়েছিল কিছু দিন। মাসুমের বয়োবৃদ্ধ বাবা এখনও একমাত্র পুত্র হত্যার বিচারের নথি বুকে চেপে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। সরকার যায়, সরকার আসে। গল্পের ছকে কিছু পরিবর্তন বা বৈচিত্র্য মাঝে মধ্যে হয়তো আসে। কিন্তু বন্ধ হয় না বিচারবিহীন হত্যার মহোৎসব। চারদলীয় জোট সরকারের প্রথম দিকে সামরিক বাহিনীর নেতৃত্বে পরিচালিত অপারেশন ক্লিনহার্টের সময় ৫৬ জন এরকম হত্যার শিকার হয়েছিল। ওই সময় এ হত্যাকাণ্ডগুলোকে ক্রসফায়ার বলা হয়নি। তখন বলা হয়েছিল তারা হার্টফেল করে মারা যাচ্ছে। পরে ক্ষতিগ্রস্ত স্বজনরা মামলার উদ্যোগ নিতেই ইনডেমনিটি দিয়ে ওসব হত্যার সাথে জড়িতদের রক্ষায় আইনি পদক্ষেপ নিয়েছিল তৎকালীন সরকার।
তারপর ২০০৪ সালে বিশেষ বাহিনী র্যাব প্রতিষ্ঠার পর নতুন ফর্মুলায় শুরু হয় বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের মহোৎসব। এভাবে গত সাত বছরে ক্রসফায়ার, হার্ট অ্যাটাক, এনকাউন্টার, বন্দুকযুদ্ধের নামে এরকম হত্যাযজ্ঞের সাফাই গাওয়া হচ্ছে। এসব অ্যাকশনে গত সাত বছরে দেশে সন্ত্রাস কমেনি। বরং সন্ত্রাসী আর জঙ্গিরা নতুন নতুন চক্রের সহায়তায় চালিয়ে যাচ্ছে তাদের অপকর্ম। মহাজোটের নির্বাচনী অঙ্গীকারে এমন হত্যাযজ্ঞ বন্ধের অঙ্গীকার ছিল। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে দাঁড়িয়ে অতীতে সংঘটিত এমন হত্যাকাণ্ডগুলোর বিচার বিভাগীয় তদন্ত অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছিলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলে প্রদত্ত বক্তৃতায় অঙ্গীকার করেছিলেন এরকম বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সরকার আর চলতে দেবে না। মাঝে মধ্যে বলা হয়েছে ‘জিরো টলারেন্সের’ কথা। এখন বলা হচ্ছে আইন–শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের শেষ ধাপ হিসেবে নাকি বন্দুকযুদ্ধ ক্রসফায়ারের ফর্মুলাকে সরকার বেছে নিয়েছে। আমরা মনে করি, এরকম মানবতাবিরোধী ফর্মুলা কোনো অজুহাতেই চালু থাকতে পারে না।
মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) শুরু থেকেই এধরনের বিচার–বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে। সংবাদ সম্মেলন, লেখালেখি, তথ্যানুসন্ধানসহ আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে আসক ভূমিকা রেখে চলেছে। এ ব্যাপারে আসক, ব্লাস্ট ও কর্মজীবী নারী যৌথভাবে এ বছর হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করে, যার প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট সংশ্লিষ্টদের প্রতি কারণ দর্শাও নোটিশ জারি করে। আইন ব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রতার মধ্যে এখনো এ রিট আবেদনের নিষ্পত্তি না হলেও এরকম হত্যাযজ্ঞ থেমে নেই। এরি মধ্যে মাদারীপুরে কথিত বন্দুকযুদ্ধে দুই সহোদরের মৃত্যুর ঘটনায় হাইকোর্ট র্যাব কমকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কারণ দর্শাতে সুয়োমোটো রুল জারি করেন। আর দশটা মামলার মতো এখানেও সরকার রুলের জবাবদানের জন্য সময় প্রার্থনা করেছে। অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা মনে করেন, এরকম সময় প্রার্থনায় যত না প্রস্তুতির বিষয় থাকে, তার থেকে বেশি থাকে কালক্ষেপণের প্রচেষ্টা। সে যাই হোক, আমরা মনে করি গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও কথিত ক্রসফায়ার এনকাউন্টার এক সাথে চলতে পারে না। তাছাড়া জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের সদস্য হিসেবেও বাংলাদেশ রাষ্ট্র এরকম বিচারবহির্ভূত হত্যাকে নৈতিক দিক দিয়ে উৎসাহিত করতে পারে না।
কেস স্টাডি–১ ২০০৮ সালের ২২ জুলাই র্যাব পরিচয় দিয়ে পাঁচজন সাধারণ পোশাকধারী সিরাজগঞ্জের বেলকুচি থানাধীন নিজ গ্রামের বাড়ির সন্নিকটবর্তী ধুকুরিয়া বেড়া বাজার থেকে প্রকাশ্যে তুলে আনে ঢাকার রামপুরার টিটুকে। ঢাকায় আনার সময় উপজেলা সদর থেকে দু’ব্যক্তির কাছ থেকে দুটি মোটর সাইকেল দুঘণ্টা পরে ফেরত দেবে বলে ঐ ব্যক্তিরা নিয়ে যায়। পরদিন স্থানীয় থানায় র্যাবের গাড়িতে মালিকদের ফিরিয়ে দেয়া ঐ মোটর সাইকেল দুটি বেলকুচি থানায় নিয়ে আসা হয়। থানায় রেকর্ডকৃত জিডি অনুসারে, র্যাব–৩–এর ডিএডি মোখলেছুর রহমান র্যাবের গাড়িতে মোটর সাইকেল দুটি বেলকুচি থানায় নিয়ে আসেন। পরে থানার মাধ্যমে মালিকরা মোটর সাইকেল দুটি বুঝে নিয়ে যায়। সেই থেকে অদ্যাবধি টিটুর কোনো সন্ধান পাননি তার স্বজনরা (সূত্র: আসক তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদন, এপ্রিল ২০০৯)।
কেস স্টাডি–২ বরিশালের বাকেরগঞ্জ থানার কালিদাসিয়া গ্রামের আলাউদ্দিন। এ বছরের ১৮ জানুয়ারি রোববার সন্ধ্যায় বাড়ির নিকটবর্তী কালিদাসিয়া চৌরাস্তায় পাড়া–প্রতিবেশীদের সাথে কথা বলা অবস্থায় সাদা পোশাকের কয়েক ব্যক্তির হাতে আলাউদ্দিন ধৃত হন। উৎসুক লোকজন জানতে চাইলে তারা নিজেদের পুলিশের লোক বলে পরিচয় দেয়। এর কয়েক ঘণ্টা পর কোতোয়ালি থানাধীন দুর্গাপুর গ্রামের যাত্রাঘাট ব্রিজ সংলগ্ন স্থানে রাস্তার দুপাশে ব্যারিকেড দিয়ে রাস্তা বন্ধ করে বন্দুকযুদ্ধের মহড়া চালানো হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা আসক তদন্ত দলকে জানান। পরবর্তীকালে কোতোয়ালি পুলিশ দাবি করে, সঙ্গীদের নিয়ে ডাকাতির প্রস্তুতি নেয়ার সময় পুলিশ অভিযান চালালে দু’পক্ষের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধে আলাউদ্দিন নিহত হয়েছে। পারিবারিক জমিজমার দ্বন্দ্বে কতিপয় আত্মীয় পুলিশ দিয়ে একমাত্র তাদের পুত্র আলাউদ্দিনকে কথিত বন্দুকযুদ্ধের নামে হত্যা করিয়েছে বলে তার বৃদ্ধ বাবা–মা অভিযোগ করলেন। তথ্যানুসন্ধান করার পর আসক–এর পক্ষ থেকে ১৯.০২.২০০৯ তারিখে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে আলাউদ্দিনের মৃত্যুর বিষয়টি অবহিত করা হয় এবং এ বিষয়ে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়। মানবাধিকার কমিশনের পক্ষ থেকে পুলিশের আইজিকে আলাউদ্দিনের মৃত্যুর বিষয়ে উত্থাপিত অভিযোগের তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে ৬.০৯.২০০৯ তারিখের মধ্যে প্রতিবেদনাকারে কমিশনকে অবহিত করার অনুরোধ জানানো হয়। ওই সময়সীমার মধ্যে পুলিশের কাছ থেকে কোনো প্রতিবেদন না পাওয়ায় সর্বশেষ ১৪.১০.২০০৯ তারিখে মানবাধিকার কমিশনের পক্ষ থেকে পুনরায় অনুরোধ জানানো হয় ।
কেস স্টাডি–৩ ৯.১০.২০০৯ খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা নিরাপদ বৈরাগীকে কথিত বন্দুকযুদ্ধের নামে হত্যা করা হয়। পার্শ্ববর্তী দাকোপ থানার চালনা বাজারের স্টাইল ট্রেইলার্স নামের এক দোকানে সেলাইয়ের কাজ করতেন তিনি। কর্মস্থল থেকে ধরে নিয়ে ডুমুরিয়ায় নিয়ে হত্যা করা হয় তাকে। নিরাপদ বৈরাগীর মৃত্যুর পর তার মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় জানাজানি হলে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।
কেস স্টাডি–৪ গত ২২ আগস্ট ২০০৯ তারিখে পুলিশের আইজিপি ও র্যাবের মহাপরিচালক কুষ্টিয়ায় গিয়ে এক বৈঠকে আইন–শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সন্ত্রাস দমনে তৎপর হওয়ার নির্দেশ দেন। এরপর থেকেই কুষ্টিয়ায় একের পর এককথিত সন্ত্রাসী ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হতে থাকে। হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার্স ফোরাম ও আসক তদন্ত ইউনিট ২২ নভেম্বর ২০০৯ পর্যন্ত তিন মাসে এসব ‘বন্দুকযুদ্ধে নিহত’ হওয়ার কয়েকটি ঘটনায় তথ্যানুসন্ধান করে। তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, প্রায়শ নিজ বাড়ি বা এলাকা থেকে প্রকাশ্যে ধরে, পরে বন্দুকযুদ্ধের মহড়া চালিয়ে কথিত চরমপন্থি সন্ত্রাসীদের হত্যা করা হয়েছে। এসব কথিত সন্ত্রাসীদের কারও কারও বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তাদের মধ্যে এমনও ব্যক্তি আছেন, যারা এক সময় অপরাধমূলক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকলেও পরবর্তীকালে দীর্ঘদিন ধরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছিলেন। তথ্যানুসন্ধানের সময় এমন তথ্যও পাওয়া গেছে– মাদক ব্যবসার আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে একটি গ্রুপের পক্ষ নিয়ে কথিত সন্ত্রাসী দমনের নামে প্রতিপক্ষ গ্রুপের লোকজনকে পুলিশ হত্যা করেছে। গত ২৯ আগস্ট ২০০৯ কুষ্টিয়া সদর উপজেলার পূর্ব মজুমপুর রেলওয়ের ঘের লাইন সংলগ্ন বেলতলা কলাবাগানে মোঃ সোহেল (২৩) এবং মোঃ সাইফুল ইসলাম সুমনকে (২৬) গুলি করে সাদা পোশাকধারী পুলিশ দল। তথ্য পাওয়া যায়, ওই সময় ওই পুলিশদের সাথে এলাকার মাদক সম্রাট বলে পরিচিত বিপুল চৌধুরীর লোক রোকনও ছিল। তথ্যানুসন্ধানের সময় সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দাবি করেন, দু’জনই এলাকার মাদক ও অস্ত্র ব্যবসায়ী। তবে তিনি জানান– সোহেলের নামে থানায় কোনো মামলা নেই। সুমনের নামে মামলা আছে। এদিকে এ ঘটনার সবচেয়ে আকর্ষন দিক হচ্ছে, চরমপন্থি পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টি এমএলও এ দু’জনের হত্যার দায় স্বীকার করে বিবৃতি দিয়েছে। অপর এক তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়– এক সময় চরমপন্থি দলের সাথে সম্পর্ক থাকলেও তিন–চার বছর আগে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছিল মোঃ আশরাফুল ইসলাম আশা। চাকরি করতেন ঢাকার উত্তরার একটি অফিসে। ৬ সেপ্টেম্বর ২০০৯ বেলা ৩টায় র্যাব সদস্যরা তার কর্মস্থল থেকে আটক করে ঐদিন দিবাগত রাতে (আনুমানিক ৭ সেপ্টেম্বর ২০০৯ ভোররাত ৫টায়) কুষ্টিয়া সদর উপজেলার জিয়ারসী ইউনিয়নের জি কে ব্রিজের পাশে ফাঁকা মাঠে গুলি করে হত্যা করে। কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের নাহারুল ইসলাম গত ২১ আগস্ট ২০০৯ শুক্রবার সকালে পার্শ্ববর্তী শফি মালিথার বাড়িতে কামলা খাটতে গিয়েছিল। ওখান থেকে হাতে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে আত্মীয়স্বজনসহ স্থানীয় লোকজনের সামনে দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় নাহারুলকে। পরের দিন ২২ আগস্ট ২০০৯ স্বজনরা খবর পায়, পিয়ারপুর ইউনিয়নের জগন্নাথপুর গ্রামের কওছের বিশ্বাসের বাগানে নাহারুলের লাশ পড়ে আছে। যথারীতি পুলিশ কথিত বন্দুকযুদ্ধের দাবি করলেও স্বজনরা দাবি করেন, চার বছর আগের এক হত্যা মামলার পূর্ব শত্রুতার জের ধরে ঐ মামলার বাদি শফি গংয়ের যোগসাজশে টাকার বিনিময়ে পুলিশ এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।
কেস স্টাডি–৫ চট্টগ্রামের স্থানীয় এবং ঢাকার একাধিক জাতীয় দৈনিকে চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানাধীন এলাকা থেকে নোয়াখালীর হাতিয়ার কথিত জলদস্যু কালা বাদশা ওরফে সিকান্দর বাদশাকে গ্রেফতার সংক্রান্ত খবর প্রকাশিত হয়। ১৫ অক্টোবর ভোররাতে কালা বাদশাকে গ্রেফতারের পর ঐদিন সকালে মোবাইলে খবরটি স্থানীয় সাংবাদিকদের অবহিত করেন হাটহাজারী সার্কেলের এএসপি বাবুল আখতার। পরদিন ১৬ অক্টোবর শুক্রবার নোয়াখালীর বিশেষ পুলিশ সুপার স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করা হয়– ডাকাতির প্রস্তুতির সময় নোয়াখালীর হাতিয়ার চেয়ারম্যানঘাট এলাকায় পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে কথিত কালা বাদশা গুরুতর আহতাবস্থায় পুলিশের হাতে ধৃত হয়। নোয়াখালীর সদর হাসপাতালে নেয়া হলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। দৈনিক প্রথম আলো ও দৈনিক সমকাল–এ প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে আসক তদন্ত ইউনিটের দুই সদস্যবিশিষ্ট টিমের সরেজমিন তথ্যানুসন্ধানে প্রতীয়মান হয়, সেকান্দর ওরফে কথিত কালা বাদশাকে চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানা পুলিশ হেফাজত থেকে এনে নোয়াখালীর পুলিশ বন্দুকযুদ্ধের নামে হত্যা করেছে। স্থানীয় গ্রামবাসী জানান, মৃত্যুর পর যত বড় সন্ত্রাসী হিসেবে সেকান্দর ওরফে কালা বাদশাকে দেখানো হয়েছে, আসলে সে তত বড় কিছু ছিল না।
কেস স্টাডি–৬ টঙ্গীর হাসানের সন্ধান আজো মেলেনি। ২০০৮ সালের ২৫ মে গাজীপুর কোর্ট থেকে হাজিরা দিয়ে ফেরার পথে টঙ্গী হাসান আলী সরকার সরকারি কলেজের সামনের ঢাকা–ময়মনসিংহ রোডে যাত্রীবাহী বাসের আরোহী মোঃ হাসান খানকে তার স্ত্রী হাসি বেগমের পাশ থেকে তুলে নিয়ে যায় র্যাব। স্থানীয় লোকজন এলাকায় নিয়মিত টহলের কারণে আগে থেকেই র্যাবের কোনো কোনো সদস্যকে চিনতেন। হাসানকে ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় উপস্থিত র্যাব সদস্যদের দু’একজনের পরিচয় সম্পর্কেও তারা নিশ্চিত হওয়ার মতো তথ্য দেন। হাসানের স্ত্রীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে আসকের তথ্যানুসন্ধানের পর আসক নির্বাহী পরিচালক ২৩ জুলাই ২০০৮, র্যাবের ডিজি বরাবর পাঠানো পত্রে হাসানের অবস্থান ও অবস্থা সম্পর্কে তার পরিবারকে অবহিত করার অনুরোধ জানান। এ ব্যাপারে র্যাব কর্তৃক আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য প্রদান না করা হলে ২১ অক্টোবর ২০০৮ উল্লিখিত হাসান খানকে আদালতে উপস্থাপন করার প্রতিকার চেয়ে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) ও হাসানের স্ত্রী হাসি বেগম যৌথভাবে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেন। রিটের প্রেক্ষিতে ২৬ অক্টোবর ২০০৮ হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ হাসান খানকে তিন সপ্তাহের মধ্যে আদালতের সামনে উপস্থিত করার জন্য প্রতিপক্ষের ওপর রুলনিশি জারি করেন। উক্ত মামলাটি অদ্যাবধি (৬.১২.২০০৯) শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট আইনজীবী জানান।
– শাহ আলম ফারুক, মানবাধিকার কর্মী ও আইনজীবী, সম্পাদক (অ:), সোজা কথা ডটকম
লেখাটি লেখার সময় লেখক আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)-এর সিনিয়র তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের ২০০৯ সালের ডিসেম্বর ত্রৈমাসিক বুলেটিনে ছাপা লেখাটির লিংক