হাবিব খান :মহামারি করোনাভাইরাসেও জীবনের ঝুকি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে সাংবাদিকরা। এ পর্যন্ত করোনার থাবায় প্রাণ হারিয়েছেন তিনজন সাংবাদিক। দুর্যোগকালীন এই সময়েও অনেক পত্রিকা-টেলিভিশন-অনলাইন গণমাধ্যমে সাংবাদিক ছাঁটাই করা হচ্ছে। অনেক প্রতিষ্ঠান মাসের পর মাস কর্মীদের বেতন দিচ্ছে না। এসব কিছুকে তুচ্ছ করে করোনা যুদ্ধে ডাক্তার-নার্স-পেশাগত বাহিনীর সঙ্গে কাজ করে চলেছে গণমাধ্যমের এই সকল কর্মীরা। রাষ্ট্র যেখানে অন্য পেশার সকলের জন্য প্রণোদনা দিচ্ছে বিমার সুবিধা দিচ্ছে। সেখানে শুধু আহ্বান আর বক্তব্য বিবৃতি দিয়েই রাষ্ট্র গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে দায় সারছে? । মহামারির সময়ে যেখানে তথ্য একটি অন্যতম হাতিয়ার সেখানে সরকার তথ্য গোপনের জন্য একের পর এক সাংবাদিক গ্রেপ্তার করছে এই সময়েও। ফেসবুকে লাইক শেয়ার কমেন্ট পোষ্টের জন্যও গ্রেপ্তারের খবর আসছে গণমাধ্যমে তাও সেই বিতর্কিত আইসিটি এ্যাক্টে। আর গণমাধ্যম কর্মীদের সংগঠন নামক দোকান গুলোকে এই পর্যন্ত সাংবাদিকদের পাশে পাওয়া যায় নি। ব্যতিক্রম দেখা গেছে শুধু রিপোর্টারদের সংগটন ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটকে।
এদিকে গণমাধ্যমকর্মীদের চাকরিচ্যুতি বন্ধ ও তাদের বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে প্রতিষ্ঠান কর্ণধারদের আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ সরকারের তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ । সোমবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) ব্রাকের সহায়তায় ‘করোনাভাইরাস সংক্রমণের নমুনা সংগ্রহ বুথ’ উদ্বোধনকালে এ আহ্বান জানান।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, “‘করোনা দুর্যোগ পরিস্থিতির মধ্যেও আমরা দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, কিছু মিডিয়া হাউজে চাকরিচ্যুতি ঘটেছে, অনেকের বেতন দেয়া হয়নি। আমি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যেমন সংবাদপত্র, টেলিভিশন, অনলাইন কর্ণধারদের প্রতি বিনীত অনুরোধ জানাই, মহামারীর এই দুঃসময়ে দয়া করে কাউকে চাকরিচ্যুত করবেন না এবং যাদের বেতন বাকি আছে, তা দিয়ে দিন।”
হাছান মহমুদ বলেন, কারো অপরাধ থাকলেও, শাস্তি দেয়ার সময় এটি নয়। প্রতিষ্ঠান প্রধানরা হয়তো বলবেন- সমস্যা আছে, কিন্তু আমি বলবো, আগে সমস্যা ছিল না এবং কয়েক মাস পরেও সমস্যা থাকবে না।’
সাংবাদিকদের বেতন-ভাতা যাতে ঠিকমতো হয়, সেজন্য সরকারের পক্ষ থেকে অনেকগুলো পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ক্রোড়পত্রের বিল দেয়ার ব্যবস্থা করছি আমরা। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে ৫৮টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে চিঠি দিয়ে বলা হয়েছে, তাদের সংস্থা থেকে গণমাধ্যমের যত বিল বাকি আছে, সেগুলো পরিশোধের জন্য। আমাদের মন্ত্রণালয় থেকেও একটি তাগিদপত্র দেয়া হচ্ছে। এসব বিলের পরিমাণ শত শত কোটি টাকা। মালিকপক্ষ নিশ্চয়ই যোগাযোগ রাখছেন এবং তারা সহসাই বিল পাবেন। ইতিপূর্বে কখনো এধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়নি, এরূপ চিঠিও দেয়া হয়নি। এখন দেয়া হয়েছে, যাতে গণমাধ্যম, বিশেষত: সংবাদপত্রে কারো বেতন-ভাতা বকেয়া না থাকে সেজন্য।’
তিনি বলেন, গণমাধ্যমকর্মীরা জীবনটাকে হাতের মুঠোয় নিয়ে যেমন সম্মুখভাগে কাজ করছে, তেমনি গুজব নিরসনেও সোচ্চার ভূমিকা রাখছে, তাদের অভিনন্দন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন,’‘ভবিষ্যতেও যুদ্ধ-বিগ্রহ নয়, এধরনের মহামারীতেই লোকক্ষয়ের আশংকাই বেশি বলে আমি মনে করি, আর তা মোকাবেলার জন্য গবেষণা ও সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই”।
ডিআরইউ সভাপতি রফিকুল ইসলাম আজাদের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ চৌধুরীর পরিচালনায় অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (পরিকল্পনা ও গবেষণা) ও কোভিড-১৯ রেসপন্স প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক ডা. ইকবাল কবীর, আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগ সভাপতি সাইদুর রহমান সাইদ, সাধারণ সম্পাদক শেখ আজগর নস্কর, ডিআরইউ’র সহসভাপতি নজরুল কবীর, কল্যাণ সম্পাদক খালেদ সাইফুল্লাহ, দৈনিক বর্তমানের প্রধান প্রতিবেদক মোতাহার হোসেন, আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগ কেন্দ্রীয় সদস্য শফিউল আলম শফিক প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, করোনাভাইরাস দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১১ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে মোট ২৩৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে করোনায় আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন আরও এক হাজার ৩৪ জন। যা দেশে করোনা হানা দেয়ার পর সর্বোচ্চ শনাক্তের রেকর্ড। সব মিলিয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১৫ হাজার ৬৯১।
সোমবার (১১ মে) দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস বিষয়ক নিয়মিত হেলথ বুলেটিনে অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা এ তথ্য জানান।