করোনা সাম্রাজ্যে এ এক দীর্ঘতম ঈদ। উহান থেকে শুরু হওয়া করোনা সেনাদের অশ্বমেধযজ্ঞের বিজয় রথটি গোটা পৃথিবীর পথে পথে দাপিয়ে বেড়ায়। করোনা সেনাদের মার্চপাস্ট চলতে থাকে রাজপথে।
পরাজিত উন্নয়নের শক্তি ঘরে ঘরে গুমরে কাঁদে। কেউ কেউ দিবসগুলোতে অভ্যাসবশত বাণীর কোবতে লেখে। যদিও সে ক্ষমতাহীন; তবুও সে ক্ষমতার অভিনয় করে।
করোনার কাছে আত্মসমর্পিত মন্ত্রী তার মন্ত্রীত্ব চলে গেলেও; বার বার নিজেকে বোঝান, ‘এবারের ঈদ শেষ নয়, এই ঈদ পরবর্তী সুরভিত সকালের, বর্ণময় ঈদের।’
এই তো ক’দিন আগে এক উন্নয়নের তাগড়া শিল্পপতির সঙ্গে স্কাইপে গেয়েছিলেন, “আবার হবে গো দেখা; এ দেখাই শেষ দেখা নয়কো।”
শিল্পপতি গতকাল করোনায় টেঁসে গেলেন। এদিকে, মহাপরাক্রমশালী মোহম্মদপুর পরগণার জায়গীরদার; যার সামনে আন্দোলনকারী আর হেলমেট সেনারা একঘাটে জল খেতো; যার নাম শুনে বাচ্চারা ভয় পেয়ে ঘুমিয়ে পড়তো; সে বীর ভাইটি কুপোকাত হলেন করোনার কোপে।
রাজ্য হারানোর শোকে বিহবল মন্ত্রী-অমাত্য। চার ফুট পাঁচ ইঞ্চির এলিট ফোর্সের পালোয়ান, রোজ সকালে উঠে ইউনিফর্ম পরেন।
নিজেকে বোঝান, ক্ষমতা যে একেবারেই চলে গেছে; তা তো নয়; “হাসতে মানা আইনে” গ্রেফতার আর গুমের মাঝেই তো বেশ কয়েক বোতল ক্ষমতার খোয়ারি আছে।
করোনাকালে বসে খেয়ে, কোমরের পরিধি স্ফিততর হওয়ায়; বেল্টের মধ্যে বড্ডো হাঁস ফাঁস লাগে। কিন্তু এলিট ফোর্সের সেনানায়কের অভিনয় যেহেতু করতে হয়; তাই কস্টিউমও চাই।
চকিতে মনে হয়; জুমের রূপালী পর্দাতেই যেহেতু অভিনয়; নীচে লুঙ্গি পরলেই বা অসুবিধা কী! বাতাবি লেবু টিভির খবর-পাঠকরা তো শুনেছি সারাবছরই ওপরে কোট-টাই আর নীচে লুঙ্গি পরেন। ফলে নিয়ত উন্নয়নের সুবাতাস খেলে তাদের নিম্নাঙ্গ সংগীতে।
যুবকদের অনুপ্রাণিত করতে করোনায় সাবেক হয়ে যাওয়া যুব মন্ত্রী ব্রাজিলের ফুটবলারদের মতো মাথা বানিয়ে ফেসবুক লাইভে এসে বলেন, তরুণ বন্ধুরা হাল ছেড়োনা; ব্রাজিলকে দেখে শেখো; জার্মানির কাছে সেভেন আপ খেয়েও কী তারা বেঁচে নেই? করোনার কাছে একশো গোল খেলেই বা অসুবিধা কী! জীবন আসলে গোল খাওয়া আর ঘোল খাওয়ার অভিজ্ঞতা।
মোটিভেশনাল স্পিকার করোনার কারণে বেড়ে যাওয়া কাঁচা-পাকা দাড়ির মাঝে ‘ওশো’-র মতো মোটিভেশনের নূরানি জোশে ফেসবুক লাইফে ফাল দিয়ে ওঠে, জীবন মানে সাফল্য নয়; বরং ব্যর্থ হবার পরেও সাফল্যের জন্য চেষ্টা করা।
করোনার কাছে পরাজিত শাসক রবার্ট ব্রুস করোনা মাকড়সার জাল বোনার চেষ্টা দেখতে দেখতে বলেন, এভাবে আর কতোকাল লক ডাউনে থাকা যায়। আশার চেতনার দোকান গুলোর ঝাঁপ একটু একটু করে কী তোলা যায়না?
দোকানদারি বিষয়ক পরাজিত শক্তির মন্ত্রী স্কাইপে বসে মাথা চুলকাচ্ছিলেন। তিনি আশার সওদাগরের অভ্যাসে বলেন,
–সহি বলেছেন রাজাধিরাজ। নইলে জিডিপি যে জিডিপুঁ হয়ে যাবে আলেমপনা।
আজকাল কেউ “রাজাধিরাজ” বললেই রবার্ট ব্রুস নিজের গায়ে চিমটি কেটে দেখেন, “আমি কী বেঁচে আছি; নাকি মরে বেঁচে আছি! এভাবে জীবন আমি চাইনা; জীবনের মানে খুঁজে পাইনা।”
সাবেক রাজদর্জি স্কাইপে সুখবর দেয়, আমরা গার্মেন্টস চালু রেখেছি। হীরার খনির শ্রমিকের তো অভাব নাই। করোনায় মরলে মরুক তারা। করোনার বেবি-বুমাররা এসে সে শূণ্যস্থান পূরণ করবে। রানাপ্লাজা ধসের সহস্র শ্রমিকের মৃত্যুতে আমাদের কী হয়েছে? কচুটা হয়েছে।
করোনায় কর্মহীন শিক্ষামন্ত্রী; গরিবের জাস্টিন ট্রুডো হয়ে কেনাকাটার জন্য শপিং সেন্টারের লাইনে দাঁড়ালে; তার ভক্ত
রত্নদের মাঝে মুগ্ধতার আবেশ ঘন হয়।
এমন সময় করোনাসৈনিকেরা রাজপথ দিয়ে গান করতে করতে যায়, “অমন চুল খুলে আর নাইতে নেমোনা; তোমার চুলে জড়িয়ে যাবে নদী; এ ঘাটে আর আসবে না কেউ; অমন করো যদি।”
রাজাধিরাজ তার পরাজিত সেনাপতিকে ফোনে বলেন, সহজ সময়ে সেজে গুজে ছবি দিতেন চ্যালেঞ্জিং টাইম বলে; এখন দেখলেন তো চ্যালেঞ্জিং টাইম কাকে বলে! সাবধানে থাকবেন। কোয়ারিন্টিনে থাকুন।
রবার্ট ব্রুস তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ে প্রার্থনা করেন, হে খোদা; তোমার পেয়ারা বান্দাকে একী করলে তুমি! করোনার বিপদ থেকে মুক্ত করো মাবুদ।
এসময় জায়নামাজে বসে করোনাভাইরাস খিলখিলিয়ে হাসে।
রবার্ট ব্রুস রেগে যান, এই হাসছো কেন? নামাজের সময় একদম হাসে না।
করোনাভাইরাস শুভেচ্ছা জানায়, ঈদ-উল-করোনা মোবারক।
– মাসকাওয়াথ আহসান
সাংবাদিক, সাংবাদিকতার শিক্ষক
Editor-in-Chief : E-SouthAsia