সোজা কথা প্রতিবেদক, ঢাকা থেকে:
কেবল বড় বড় সভা হলো, আলোচনা হলো। কিন্তু পূর্ব রাজাবাজার ছাড়া ঢাকায় আর কোথাও এলাকাভিত্তিক লকডাউন শুরু করতে পারেনি সরকার। কিন্তু জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন জানিয়েছেন ঢাকা মহানগরীর কয়েকটি জায়গায় ছোট আকারে রেড জোন ঘোষণা করে ছুটি আসছে ।
বুধবার (২৪ জুন) প্রতিমন্ত্রী এ কথা জানান। গত ২১ জুন মধ্যরাতে ১০ জেলার ২৭টি এলাকা ও পরদিন ২২ জুন পাঁচ জেলার ১২ এলাকাকে রেড জোন হিসেবে তালিকাভুক্ত করে সেখানে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
সর্বশেষ মঙ্গলবার (২৩ জুন) দেশের চার জেলার ৭টি এলাকাকে রেড জোন ঘোষণা করা হয়। করোনা আক্রান্ত সবচেয়ে বেশি ঢাকায় থাকলেও সেখানে এখনও রেড জোন ঘোষণা করা হয়নি। তবে পরীক্ষামূলকভাবে রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজারকে রেড জোন ঘোষণা করে সেখানে লকডাউন বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
ঢাকায় রেড জোন ঘোষণার বিষয়ে জানতে চাইল জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘ঢাকায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ অফিস রয়েছে। এখানে অনেক শিল্প-কারখানা আছে। আবার ম্যানেজমেন্টও ঠিক করতে হচ্ছে। আশা করছি, এখানেও বেশ কয়েকটি জায়গায় ছোট ছোট আকারে রেড জোন ঘোষণা করা হবে। তালিকা পেলেই আমরা ছুটি ঘোষণা করব।’
তিনি বলেন, ‘প্রশাসনিক বিষয় হওয়ায় রেড জোনের তালিকা ও ছুটির ঘোষণার আদেশ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে হচ্ছে। তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এর সঙ্গে ইনভলব থাকে, তারা যাচাই-বাছাই করে।’
রেড জোন ঘোষণার প্রক্রিয়া তুলে ধরে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘প্রথমে সিভিল সার্জন তার এলাকা অ্যাসেস করবেন। এরপর জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের সঙ্গে আলাপ করবেন। একই সঙ্গে সংসদ সদস্যসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপ করবেন। সিদ্ধান্তে আসার পর তারা স্বাস্থ্য অধিদফতরের অনুমতি চাইবে। স্বাস্থ্য অধিদফতর অনুমতি দিলে তারা আমাদের কাছে আবেদন জানাবে ছুটি ঘোষণার জন্য।’
‘এ ছাড়া সেখানে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কাজ আছে, ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের কাজ থাকতে পারে। তখন সমন্বিতভাবে একটি কমিটি তৈরি করে রেড জোন বাস্তবায়ন করা হয়’, বলেন ফরহাদ হোসেন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস গতকালও বলেছেন, যেদিন এলাকাভিত্তিক সিদ্ধান্ত পাবেন, তারপর ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টা হয়তো সময় লাগবে। তবে তাদের যে প্রস্তুতি, তাতে তার আগেই শুরু করতে পারবেন। প্রায় একই ধরনের কথা বলেছেন উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলামও।
তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখনো সুনির্দিষ্টভাবে এলাকাই চিহ্নিত করা যায়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কারিগরি দলের এক সদস্য বলেন, এখনো চূড়ান্ত হয়নি। কাজ চলছে। চিহ্নিত করতে সময় লাগবে।
ঢাকার পূর্ব রাজাবাজারের লকডাউন গতকাল মঙ্গলবার থেকে সাত দিন বাড়িয়ে ২১ দিন করা হয়েছে, যা আগামী ৩০ জুন শেষ হবে। আর দুই সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এলাকা সুনির্দিষ্ট করে দেওয়ার পর ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টা সময় লাগবে তাদের লকডাউন বাস্তবায়ন করতে। ফলে এসব তথ্য বলছে, ঢাকায় এলাকাভিত্তিক লকডাউন পিছিয়ে গেল।
অথচ ২৩ দিন আগে ১ জুন সরকারের উচ্চপর্যায়ের এক সভায় করোনাভাইরাস পরিস্থিতি অবনতি হওয়ায় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকাকে লাল (উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ), হলুদ (মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ) ও সবুজ (নিম্ন ঝুঁকিপূর্ণ) এলাকায় ভাগ করে ‘ভিন্নমাত্রায়’ এলাকাভিত্তিক লকডাউন দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবতা হলো, ঢাকার আর কোথাও লকডাউন হয়নি। অবশ্য ঢাকার বাইরে ১৮টি জেলায় ছোট ছোট দেড় শর বেশি এলাকায় লকডাউন চলছে, ছুটিও ঘোষণা করা হয়েছে। যদিও লকডাউন ঢিলেঢালাভাবে পালিত হচ্ছে।