ডাক্তার ইকবাল কবির আমার আপনজন, দীর্ঘ সময়ের একটা ঘনিষ্ট সস্পর্ক, ব্যাক্তিগত ও পারিবারিক, আজ আমি সেটা বোঝাতে পারবো না । চোখে মুখে একটা আদর্শ এমন মার্জিত মানুষ শুধু আমাকে নয়, অনেককেই আকর্ষণ করতো। কী অদ্ভূত কারণে আরো অনেকের মত সে ছিলো আমার ভক্ত। সেই সময় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের আলোকিত মানুষ হবার মিছিলে অগ্রণী আমরা। আমি যখন ময়মনসিংহ উপজেলা ম্যাজিষ্ট্রেট, ইকবাল ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র। একটা উন্নত দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখতাম । কী কারণে অনেক বছর ধরে যোগাযোগ নেই। সস্প্রতি ইকবাল করোনা ব্যবস্থাপনায় দায়িত্বে ছিলো। প্রাণরক্ষায় জরুরি সামগ্রী কেনাকাটায় ইকবালের কোটি টাকা আত্মসাতের খবর পেলাম। এটা জাতীয় সংবাদপত্রের খবর, আপনারা জানেন বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত গড়িয়েছে। এইসব খবরে আমি অনেকটা নিজের ভেতরে ভেঙ্গে পড়ি। এটা একটা ঘটনা নয়, একটা যুগের প্রবনতা। এসব দুনীতির ঘটনা সরকার কখনো স্পস্ট করেনা, কেবল দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়।
এদেশের শাসকের বিরুদ্ধে কমবেশি দুনীতির অভিযোগ আছে। কিন্তু মাঝে মাঝে তারাও দুনীতির ব্যপকতায় অতিষ্ট ও বিক্ষুব্ধ হন। আমার মনে আছে, একবার হোসেইন মো. এরশাদ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সমাবেশে বলেছিলেন: যাকে দাযিত্ব দিই, সেই টাকা মেরে দেয়, ইচ্ছা হয় ব্রাশ ফায়ার করে মেরে ফেলি। এখনকার মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আলোচিত বক্তব্যটি আপনারা জানেন: ‘আমাকে ছাড়া সবাইকে কেনা যায়। এ কথার মমার্থ একট জাতির জন্য খুবই ভয়ংকর। সব চেযে ভয়ংকরভাবে আশাভঙ্গ ঘটেছিলো বঙ্গবন্ধুর, তিনি তো দুনীতিবাজদের “ খতম করার” জন্য জনতাকে সরাসরি নির্দেশ দিয়ে গেছেন, মরার আগে।
দেশ অনুন্নত হলে এসব হয়। আপনি দুনীতির জন্য দায়ীদের সরিয়ে দেয়া, খতম করার, ব্রাশ ফাযার করার কথা না বলে একটা সিস্টেমকে এক্টিভেট করতে পারতেন। কিন্তু তারা তা করেননি। করতে পারেন না। কেনো আমি এখানে নাই বা বললাম।
কিন্তু অন্যদিকে আপনি লক্ষ্য করুন, দুনীতি দমনের চেয়ারম্যানের কথা। তিনি বলছেন, বড় বড় প্রকল্পের তথ্য নাকি তাকে দেয়াই হয় না। তিনিও বড় কাজ করেন না। কয়েকদিন আগে আমি দেখলাম, দুনীতি দমনের লোক এজি অফিসের ভিতরে ই্ঊনিফরম পড়ে ঘুরছে, কেনো? এজির কেরানি ধরার জন্য? এসিসি স্বাস্থ্য মন্ত্রনালযের দুনীতির তদন্ত করে রিপোর্টটা দিয়ে আসে স্বাস্থ্য মন্ত্রীকে। হায়, কপাল!
এই দেশে এখনো কি দেশে চালাবার মতো শ খানেক সৎ মানসের সন্তান নেই? সদ্য প্রয়াতো ক্যাবিনেট সচিব সাদত হোসাইনে বলেছিলেন, ৫ জন সচিব,এবং ৫টি প্রতিষ্টাণের প্রধানকে রাষ্ট্রপ্রধান/ প্রধানমন্ত্রী যদি নিদেশ দেন, আপনার অধীনে দুনীতি হলে আপনারা দায়ী থাকবেন। আপনি আইনের কাছে দায়ী থাকবেন, আমি সেটা তদারক করবো। দুনীতি লুন্ঠণ থেমে যেতে পারে এক রাতের নিদেশে।
না, এরা সেদিকে যাবে না। আমরা মরছি। আজ মধ্যবিত্ত সন্তানও ঠিকমত বাচতে পারছে না, ঢাকা ছাড়ছেন দলে দলে, ঘর ভাড়া দিতে পারছেনা। যেখানে সেখানে পড়ে মরে থাকছে মানুষ।
হাসপাতাল বাচাতে পারছে না অসুস্তকে-, চুর চামরী একটা জাতীয় পলিসি হিসেবে গ্রহনযোগ্য হযে গেছে। কে কারে ধরবে?রাস্তায় হাত পাতে পিতার বয়সী মানুষ, কিছু একটা দাও। আমরা একটা মুক্তিযুদ্ধ করেছি। আমাদের খুব সহজে ক্রোধ, কান্না আসে। বারবার ডা, ইকবাল কবিরের মুখটা মনে পড়ে। এদেশে কারো পক্ষেই ঠিক থাকা সম্ভব নয়? ১০ লাখ মানুষ আত্মহুতি দিয়েছে একাত্তরে। কাকে নিয়ে লড়বো? গত কয়েক বছর ধরে আমি বন্ধ হারাতে হারাতে একটা শুণ্য রেখায় এসে দাড়িয়েছি। তবু গড়মানুষের ভয়ংকর উত্থানের আশা রাখতে বলি।
– ড. শেখ বাতেন
মুক্তিযোদ্ধা, গবেষক এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক