সোজা কথা ডটকম
  • প্রচ্ছদ
  • বাংলাদেশ
  • বিশ্ব
  • মানবাধিকার
  • খেলাধুলা
  • তথ্যপ্রযুক্তি
  • বিনোদন
  • প্রবাস
  • মতামত
  • যুক্তরাজ্য
  • স্বাস্থ্য
  • বিবিধ
    • কলাম
    • ভিডিও
    • সোশ্যাল মিডিয়া
    • লাইফস্টাইল
    • সাক্ষাৎকার
No Result
View All Result
  • প্রচ্ছদ
  • বাংলাদেশ
  • বিশ্ব
  • মানবাধিকার
  • খেলাধুলা
  • তথ্যপ্রযুক্তি
  • বিনোদন
  • প্রবাস
  • মতামত
  • যুক্তরাজ্য
  • স্বাস্থ্য
  • বিবিধ
    • কলাম
    • ভিডিও
    • সোশ্যাল মিডিয়া
    • লাইফস্টাইল
    • সাক্ষাৎকার
No Result
View All Result
সোজা কথা ডটকম
No Result
View All Result

মাসকাওয়াথ আহসানের স্মৃতিগদ্য -টু মেনি গুড পিপল:

ডেস্ক রিপোর্ট by ডেস্ক রিপোর্ট
সোমবার, ৭ মার্চ, ২০২২ | ৫:২৫ অপরাহ্ণ
in লাইফস্টাইল, সংবাদ শিরোনাম, সাহিত্য
0
দৃষ্টিসীমা অশ্রুবিন্দু হয়ে বাষ্পে মিলিয়ে যায়

জীবনের অর্ধশতক পূর্ণ হবার পর পাঠক বন্ধুরা ফেসবুকের ইনবক্সে বললো; প্রাকবৃদ্ধ বলছেন নিজেকে; সুতরাং এবার আপনার আত্মজীবনী চাই। বিভিন্ন ওয়েব পোর্টালের সম্পাদক বন্ধুরা বললো, খুশওয়ান্ত সিং-এর ভক্ত আপনি; পারবেন অমন সাহসী অটোবায়োগ্রাফি লিখতে! হুমায়ূন আজাদ বলেছিলেন, বাঙালি আত্মজীবনী লেখার সময় নিজেকে ফেরেশতা হিসেবে উপস্থাপনের অপচেষ্টা করে!আমার স্ত্রীর স্কুলিং হয়েছিলো এমেরিকান স্কুলে। ওর বাবা এয়ারফোর্সের অফিসার হিসেবে লিয়েনে কুয়েতে কাজ করার সূত্রে পৃথিবীর নানাদেশের শিশুদের সঙ্গে বেড়ে ওঠে। ফলে ওর মননে “চার লোগ কীয়া কাহেগা” বা “পাছে লোকে কিছু বলে” নেই। তাই অটোবায়োগ্রাফি লেখার কথা উঠলে অনুরোধ করে, সাউথ এশিয়ান এভারেজ রাইটারের মতো লুকিয়ে ছাপিয়ে লিখোনা প্লিজ; শিল্পের কাছে অনেস্ট থাকো; নইলে লেখার দরকার নাই।

এরপর স্মৃতিগদ্যে হাত দিয়েছি। ৫০ বছরের জীবনের ইতিউতি লিখে রাখি ডিজিটাল ডায়েরিতে। কিছু বন্ধু পাঠ প্রতিক্রিয়া দেন। তাদের অনুপ্রেরণায় লেখা এগোতে থাকে।১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় আব্বার-আম্মার কোলে পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে। এক রাতে এক বাসায় আশ্রয় নিলে প্রথমে সে বাসার আন্টি বলেন, মাত্র একটা বাচ্চা আপনাদের। আম্মা হাসেন। সকালে বিদায় নেবার সময় আন্টি বলেছিলেন, বোন আমার এগারোটা বাচ্চা নিয়ে যে যন্ত্রণা নাই; আপনার একটাই তা করে। আম্মার জন্য মায়া হয়েছিলো আন্টির।ঈশ্বরদী আন্তর্জাতিক মাদক চোরাচালানের রুট হওয়ায়; ইতালির মতো মাফিয়া-গড ফাদার অধ্যুষিত ছিলো সেই বৃটিশ আমল থেকে। বলাই বাহুল্য আম্মার এক মামা আর আমার এক মামা জড়িয়ে পড়েছিলেন এই জগতে। আব্বা কলকাতায় একটু শান্তি নিকেতনী বন্ধুদের সাহচর্যে বেড়ে ওঠায়; আব্বার জন্য এ ছিলো শকিং একটা ব্যাপার।। আমার নামে ছোট খাট মারপিটের অভিযোগ এলে, আব্বা কপালে হাত দিয়ে বলতেন, বাংলাদেশে আসাটাই ভুল হয়েছিলো আমার।আম্মা আশ্বস্ত করেন, উনার পরিবারের অধিকাংশ মানুষই শান্তিপ্রিয়, বিদ্যানুরাগী। একজন দুজন সব ফ্যামিলিতেই ডিরেইলড হয়; ওতো আব্বার ফ্যামিলিতেও আছে।

আমার এক নানী; আমি যাতে মাস্তান না হই; সে লক্ষ্যে প্রথমে ভর্তি করলেন ঈশ্বরদী গার্লস স্কুলে। কিন্তু অন্য না্নীরা রসিকতা করতেন, এই তুই গার্লস স্কুলে পড়িস। ফলে রাগ করে এক বছর পরে চলে যাই স্কুলপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সেখান থেকে ক্লাস ফাইভে ফার্স্ট গ্রেডে বৃত্তি পেয়ে; এরপর একের পর এক স্কুল বদলাতে থাকি। ঈশ্বরদী সাড়া মাড়োয়ারি বিদ্যালয়, রাজশাহী ক্যাডেট কলেজ, আড়ানী মনোমোহিনী স্কুল, ঈশ্বরদী নাজিমউদ্দিন রেল স্কুল, পাবনা সেলিম নাজির স্কুল হয়ে অবশেষে রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলে থিতু হই। নয় বছর বয়সে আব্বা বিতর্ক শেখালেন; আর বললেন, মারপিট না করে বিতর্ক করো। কিন্তু ভালো ছাত্রদের সঙ্গে কখনোই বন্ধুত্ব হয়নি। নানা বয়সের মাস্তানের সঙ্গে সখ্য হতে থাকে। ঈশ্বরদী ভরা আত্মীয় স্বজন। কোথায় কখন কার সঙ্গে দেখা যাচ্ছে; সব রিপোর্ট আম্মার কাছে এসে যেতো। আম্মা ধরে ধোলাই দিয়ে দিতেন। আব্বা তখন আম্মাকে বলতেন, কাউন্সেলিং করো; মারলে মানুষ ঠ্যাটা হয়ে যায়; জেদি হয়ে যায়।

শিশুকালে একের পর এক বিতর্ক-বক্তৃতা-অভিনয়ে জাতীয় পুরস্কার পাওয়ায়; ক্লাসে ফার্স্ট হওয়ায়; নার্সিসিজম এসে যায়। ফলে মেয়েদের ব্যাপারে বয়সোচিত আগ্রহ বোধ হয়নি কখনো। মনে হতো; মেয়েদের কেন প্যাম্পার করতে হবে! কী এমন বিশিষ্ট তারা! ফলে সবাই যখন এডোলেসেন্সের গল্প করে; আমার তখন নিজেকে ফিশ আউট অফ ওয়াটার মনে হয়।আমার এক কাজিন ইংলিশ ভিংলিশ ছিলো; ওর বাবা সেই আমলে দেশ-বিদেশ ঘোরা মানুষ হওয়ায়; চাইতেন, আমরা ইংরেজি ভালো করে শিখি। আমার আরেক মামা বলতেন, ভাগ্নে অযথা প্রেম ট্রেমে পোড়োনা! তোমার কাজিনের সঙ্গে বিয়ে কোরো সুখী হবে। মামা তার কাজিনকে বিয়ে করে সুখী ছিলেন বলে; এটাকেই মহৌষধ ভাবতেন। কিন্তু কাজিন তো আমার চোখে নিজের বোনের মতো। তাই মামার হিতোপদেশ খুব ফানি লেগেছিলো।

ঢাকায় জাতীয় প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে মেয়েদের সঙ্গে বন্ধুত্ব হতো। মেয়েরা আমার চোখে পারসন ছিলো। ফলে সে বন্ধুত্বগুলো আজো আছে। রাজশাহী কলেজে গিয়ে কো এডুকেশানে মেয়েদের পঞ্চাশ শতাংশের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়; আর পঞ্চাশ শতাংশ আমার বন্ধুবৃত্তের মহিমায় আমাকে খলনায়ক ভাবতে থাকে।বিদেশে স্কুলিং হয়েছে; এমন এক ফিমেল ক্লাসমেটই শেষ পর্যন্ত খুব ভালো বন্ধু হয়। ভাব বিনিময়ের ভাষা ইংরেজি হলে; মেয়েদের সঙ্গে অত্যন্ত সহজ সম্পর্ক হয়; এটা এখন বুঝি। কেননা বন্ধুত্ব প্রেম যাই হয়েছে জীবনে; সবই ইংলিশ ভিংলিশের সঙ্গে। অথচ আমি নিজে বাংলাভাষার প্রেমে পর্যুদস্ত মানুষ। কলেজের সেই বন্ধু এতো সরল সোজা আর উদার মনের ছিলো; ধৈর্য্য ধরে প্র্যাকটিকাল খাতা তৈরি করে দেয়া; পড়া বুঝিয়ে দেয়া, ক্লাসে অনুপস্থিত বলে; পরীক্ষার হলে রীতিমত ব্যাটিং পার্টনার হয়ে আমাকে কলেজ পার করে দেবার কৃতিত্ব ওর। সেও একটি স্কুলের ফার্স্ট গার্ল ছিলো; আমিও একটি স্কুলের ফার্স্ট বয় ছিলাম; ফলে ও বুঝতো যে রসায়ন সাবজেক্ট আমার অসহ্য লাগে। ফিজিক্সে-স্ট্যাটিসটিক্সে ভালো, জিওমেট্রিতে ভালো; কিন্তু বেশি ভালো বাংলা আর ইংরেজিতে। আমার এই স্ট্রেংথ এবং উইকনেস বুঝে; পরীক্ষার হলে হেলপ করতো। “গার্ল” উচ্চারণটাও সে নিখুঁত ভাবে করতো; আমি ওর এমেরিকানাইযড ইংলিশ একসেন্ট নিয়ে রম্য করতাম। কিন্তু সহ্য করতো। এটুকু বুঝেছিলো; আমি পারসন হিসেবে মিশতে জানি। ছেলেদের সঙ্গে অধিকাংশ সময় কাটাই। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সময় বান্ধবীদের তেলাঞ্জলি দিই। আর পরীক্ষার আগে ওকে তেলাঞ্জলি দিই।

ও এতো সুন্দর মনের বন্ধু যে, রাজকলে আমাদের বাঁদরামির সব স্মৃতি ভুলে একদিন বলছিলো, কলেজ লাইফ নিয়ে লিখলেনা যে; কত সুন্দর সে সময়। আমার সব সময় গুড মুড স্পয়েল করার অভ্যাস। আমি বললাম, তাহলে তো তোমাকে ও তোমার বন্ধুদের নিয়ে আমরা যে বুলি করতাম; তা-ও লিখতে হবে! ওর হঠাত মনে পড়ে, তাইতো, ও যত সরল মন নিয়ে মিশতো; আমরা তো অনেক সময় তার বিপরীতে নববর্ষে বাজে টাইটেল দেয়া টাইপের বাঁদরামি করেছি। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপস্থাপনায় ওর ইংলিশ একসেন্ট এসে পড়লে; তা নিয়ে সপ্তাহ খানেক আমার বন্ধুরা দুষ্টুমি করতো। একটা মেয়ের কতটা সহ্যশক্তি; আর কতোটা ঔদার্য; তা ঐ মেঘবতী সুকর্ণপুত্রীর সঙ্গে দেখা নাহলে জানতেই পারতাম না। আসলে ওর মা ছিলেন খুব ভালো টেম্পারেমেন্টের। কিন্তু বাবা ছিলেন গম্ভীর। আর খুব স্নিগ্ধ সুন্দর মেয়ের বাবাদের তো একটা টেনশন থাকেই। কিন্তু পরে বুঝেছিলেন, সব ছেলে প্রেমের চক্কর নিয়ে ঘুরে না। ছেলে-মেয়ে বন্ধুত্বও হয়; যা সারাজীবন থাকবে হয়তো।

ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হবার পর; হলে প্রাপ্য সিঙ্গেল সিট; ছাত্রলীগ দখল করে রাখায়; ভারতে ভর্তির লক্ষ্যে গিয়ে কলকাতায় স্কটিশ চার্চ কলেজের লাক্সমির সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়। ইংলিশ মিডিয়ামের মেয়ে; ফলে লাক্সমি বলেই ডাকে ওর ইংলিশ ভিংলিশ বন্ধুরা। শবে বরাতের রাতে ওর মামার বাড়ির ছাদে বরফি এনে চকিতে আমার মুখে পুরে দিয়ে; অট্টহাসি দেয়; প্রথমে রাগ হলেও; দূর থেকে ভেসে আসা হারানো দিনের গান; আর তারাভরা আকাশের নীচে শখ করে কালো শাড়ি পরা লাক্সমিই বলা যায়; আমি যে এইটটিন প্লাস হয়েছি; তার মাহেন্দ্র মুহূর্ত।দিল্লি সেন্ট স্টিফেনসে ভর্তির বন্দোবস্ত করে; চাইলে স্কটিশ চার্চেও ভর্তি হওয়া যাবে; এমন পেন্ডুলাম ভাবনা নিয়ে দেশে ফিরলে; আমি আরবান নক্সালাইট হবো; আর দিল্লিতে হিন্দি-উর্দুওয়ালি বিয়ে করবো; এই আশংকায়; আম্মা আমাকে আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেরত পাঠান।

ইংলিশ ডিপার্টমেন্টে ৭০ জন মেয়ে আর ৩০ জন ছেলে আমাদের ব্যাচে। ফলে চার্লি চ্যাপলিনের মতো ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। ইংলিশ ভিংলিশ লন্ডনে বড় হওয়া ফিমেল ফ্রেন্ড হলো; ঢাকায় ইংলিশ ভিংলিশে পড়া আরেক বন্ধু হলো। আই আর-ইকোনোমিকস ডিপার্টমেন্টে আরো কিছু বন্ধুত্বের ইতিউতি। সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের মাথার চারপাশে চোখ। আই আর-ইকোনোমিকসের ফিমেল ফ্রেন্ডরা আমাকে ডেকে নিয়ে যায়; সেমিনার রুমে-করিডোরে সারাক্ষণ তাদেরই সঙ্গে দেখে, স্যার বললেন, তোমার যার সঙ্গে বিয়ে হবে সে হয়তো কিশলয় কিংবা উদয়নে পড়ে। একটু অপেক্ষা করো বাছা।স্যারকে বললাম, ইউনিভার্সিটির সময়টুকু মেয়েদের সঙ্গে দেখা গেলেও চব্বিশ ঘন্টার বেশিরভাগই কাটে ছেলেদের সঙ্গে। আই আর, পাবলিক এড ইকোনোমিকসের ছেলে বন্ধুরাও তো ডেকে নিয়ে যায়; সেটা স্যারের দৃষ্টি এড়িয়ে গেলো কীনা! স্যার হেসে বললেন, তোমারই সময়; তুমিই তোমার কবিতায় “থ্যানাটস লিথি নদীর জল দেবে; মর্ফিউস ঘুম পাড়াবে বলো”; আবার শেষে বলো “এঁকে দিলাম লক্ষণরেখা;” আমি কী বুঝিনা তোমার এই কবিতার বার্তাটা! গুরুর সামনে অযথা স্মার্টনেস দেখিয়ে কী লাভ! এসব পৃষ্ঠা অনেক আগে পড়েছেন উনি।

লন্ডনে বড় হওয়া বন্ধু, একে ওকে জিজ্ঞেস করে আমার বাংলা কবিতা অনুবাদ করে; অর্থ জিজ্ঞেস করে। এঁকে দিলাম লক্ষণরেখা” অভিব্যক্তি নিয়ে মেলশভিনিস্ট বলে বিতর্ক করে। আর ঢাকায় ইংলিশ মিডিয়ামের বন্ধু আমার ডায়েরিতে আবুল হাসান-নির্মলেন্দু গুণ-আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ-রফিক আজাদের কবিতার পংক্তি লিখে দেয়। ক্লাস না করায়; বিকেলে লাবাম্বায় এসে নোট বুঝিয়ে দেয়। বাইসাইকেলে চেপে ওর বাসায় যাই। ওর বাবার ডিপ্লোম্যাটদের আপ্যায়িত করার জন্য রাখা খুশিজল পান করি। আর ওর বাবার স্টাডি সংলগ্ন এক্সক্লুসিভ ড্রইং রুমে আড্ডা দিই। ওর আম্মা “আহারে ছেলেটা বাবা-মা থেকে দূরে থাকেন”- এমন মায়ায় অন্নদাত্রী হন। আব্বার সঙ্গে ঐ বন্ধুর যোগাযোগ তৈরি হয়। আমাকে ও বলে, তোমার আব্বা জ্যাকিশ্রফের মতো; আর তুমি এইরকম পাপ্পু আমির খান মার্কা কেন!

লেখালেখিসূত্রে একজন খ্যাতিমান লেখিকার মেয়ে আমাদের দুব্যাচ জুনিয়র; তার সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়। কিন্তু সে ক্যাম্পাসের মাধুরী দীক্ষিত; গোটা ক্যাম্পাস লাট্টু হয়ে ঘুরছে ওর পিছে; তাই আমি বৃটিশ কাউন্সিলে ওর সঙ্গে দেখা হওয়াটা কমিয়ে ফেলতে থাকি।এর মধ্যে তিনব্যাচ জুনিয়রেরা এসে পড়লে; ঠিকই কিশলয় স্কুলের একজনের সঙ্গে দেখা হয়; ভালো রবীন্দ্র সংগীত গায়; কিন্তু ইংরেজিতে ভালো; বাংলায় অবস্থা বেশ কাহিল। আব্বা ব্যাপারটা জেনে বলেন, তোমার দুজন ব্যাচমেটই কিন্তু সেরা। তারমধ্যে যে বাংলা ইংলিশ দুটোতেই ভালো; ওর বাবা-মা’র সঙ্গে আমাদের সাংস্কৃতিক নৈকট্য বেশি। মনে হয় তুমি ভুল করছো!আব্বা-আম্মা কোনকিছুতে বাধা দিলেই জেদ চেপে যাওয়া আমার আশৈশব অভ্যাস।

আর কিশলয় স্কুল; লন্ডনের স্কুল-উদয়ন স্কুলের বন্ধুর চেয়ে নরম-সরম। ছোট বেলা থেকে আব্বার সঙ্গে আম্মার বিতর্ক; ভিন্নমত পোষণ দেখে; আমার সহমত পোষণ করা মেয়েদের পছন্দ।ফলে ফাইনালি সহমত বন্ধুতেই থিতু হই। আমার দুজন ব্যাচমেট বিরক্ত হয়। কিন্তু সফিস্টিকেটেড বলে কিছু বলে না। কিন্তু কিশলয় স্কুল বাসার খুব আদরের মেয়ে; বড় ভাই-বোন তার কাছে দেবতার মতো। বাবা তাকে ছোট বেলা থেকে ওয়ার্ল্ড লিটেরেচারের ক্লাসিক পড়িয়ে; হলিউডের ক্লাসিক মুভি দেখিয়ে মানুষ করেছেন। ক্যানাডার নাগরিক সে; কিন্তু আমার জন্য সে ইমিগ্রেশন ছেড়ে দেয়। ওর জগত বইপড়া, মুভি দেখা, আর আর্টিফ্যাক্টস দিয়ে ঘর সাজানোর স্বপ্নের জগত। আমাকে বলতো, জীবনটা এসব ক্লিশে সংসার না হয়ে কেবল বন্ধুত্বের হলে ভালো হতো। আমিও তো সেরকমই ভাবি। কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ায় “বিয়া না করলে তো” চলেনা; ঐ যে “চার লোগ কিয়া কাহেগা।”

ওর বাবা সিভিল সার্ভিসে থাকায়; একাত্তরের যুদ্ধের পরে হাউজ এরেস্ট অবস্থায় ইসলামাবাদে ওর জন্ম হয়; তার পরই ওর আব্বা বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে ফিরে আসেন।আমার জন্য ক্যানাডার ইমিগ্রেশন ছেড়ে দিলেও; ঢাকার খানিকটা কর্কশ জীবনে কষ্ট পায়। পৃথিবীর মালিন্য যাকে স্পর্শ করেনি; সেই টেম্পেস্টের মিরান্ডার মতো জীবন তার। ভাই বোনেরা সবাই বাইরে সেটেল্ড। ঢাকার সেরা স্কুলে লিড টিচার হয়ে গেলেও যাতায়াতে কষ্ট হয়; আর এ সমাজে চলার পথে মানুষ কর্কশ আচরণ করে। সবার আদরে কমিউট করার অনুশীলন না করায়; এ সমাজে ও ছিলো মিসম্যাচ।ফলে বার বার বলে, ক্যানাডায় চলে যাওয়া ছাড়া উপায় নাই। এই লুন্ঠক-লম্পট-দাম্ভিক-ক্ষমতার কেশর দুলানো ঘাতক সমাজে; ও নিজের ভবিষ্যত দেখতে পায়না। কিন্তু আমার তখন দেশপ্রেমের বেমারি-উগ্রজাতীয়তাবাদের কাঁপন। আর ঢাকায় আমি সফল; আমি তো ঈশ্বরদীর ছেলে; চাইলে কোমল হতে পারি; চাইলে কঠোর হতে পারি। এমনকী যেভাবে অনলাইন মিডিয়া যুগ আসছিলো; ঈশ্বরদীতে বসেও; জীবনে যা করছি; তা করতে পারি। কিন্তু ওর মন টিকছিলো না। আর ঢাকায় বড় হওয়ায়; ঈশ্বরদীতে থাকা ওর জন্য অত্যন্ত কষ্টকর। এরমধ্যে মিদ্রাহ’র আগমন ঘটেছে; চঞ্চল মিদ্রাহ আর তার চঞ্চল বাবা; রীতিমতো বাসায় রেস্টলেসনেসের হৈ চৈ। ও বললো, তোমরা দুজন খুব হেকটিক। আসলেই তো ওর বাবা-চাচা-ভাইয়েরা অত্যন্ত কোমল; নিচুস্বরে কথা বলা নিপাট ভদ্রলোক। আমার বাবা-ছোট ভাই বা আত্মীয়েরা যেমন। শুধু আমি আর মিদ্রাহই দুর্বিনীত।

ও যেহেতু খুব আধুনিক; আমার এরিয়া অফ প্রাইভেসিকে গুরুত্ব দেয়; আমার প্রথম ও শেষ ভালোবাসা শিল্প; সেটা শিল্প হয়ে উঠুক বা না উঠুক। তাই বললো, তোমার লেখালেখি, মিডিয়ার কাজ, বিতর্ক; যা নিয়ে ব্যস্ত থাকো; সেগুলো বিকশিত নাহলে তো তুমি বাঁচবে না। ক্যানাডায় কেউ আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর সুযোগ দেবে না; ঢাকা কিংবা জাহাঙ্গিরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; এমনকী কমনওয়েলথ রিকগনিশন; এসব কোন কিছুকেই পাত্তা দেয়না পশ্চিমারা। ওদের সিস্টেমে আবার মাস্টার্স করতে হবে। আর পশ্চিমে তো গল্পের প্লট নাই; নিশ্চল মঞ্চ; ওখানে খলনায়ক নেই; এন্টি থিসিস নেই। আমি কী করবো ওখানে গিয়ে! অযথা হতাশ হয়ে সারাদিন খুশিজল খেয়ে মান্টোর মতো নিঃশেষ হবো; এমন হয়েছে বাংলাদেশের অনেক প্রবাদ প্রতিম লেখকের। তখন একই ছাদের নীচে তিক্ত বাবাকে দেখে বড় হলে মিদ্রাহ’র মাঝে শিভালরি গ্রো করবে না। কারণ শিশুকাল থেকে সে সফল বাবা-চাচ্চুদের দেখে বড় হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত খুব কঠিন ছিলো। কিন্তু বন্ধুত্ব তো নষ্ট হয়না; দূর থেকে শুভাকাংক্ষা-মঙ্গলাকাংক্ষা ধরে রাখা ভালো; অযথা ঠেলেগুঁজে একসঙ্গে থাকার তিক্ত চেষ্টা করার চেয়ে। আমরা দুজনেই লিটারেচারের ছাত্র-ছাত্রী। আমরা দু’জন সম্পর্কের সুষমা ধরে রাখার গুরুত্ব বুঝলেও আমার-ওর চারপাশের অন্যদের এই “সিদ্ধান্ত’ বুঝতে আজো কষ্ট হয়। আমাদের সমাজে, আইদার ইউ আর উইদ মি অর এগেইন্সট মি’র লোকজ জেদ। কিন্তু আমরা দুজন বিশ্বনাগরিক। আমাদের মায়া আছে-ভালোবাসাও আছে; কিন্তু প্রতিষ্ঠান নামের গার্বেজ ম্যানেজমেন্টকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছি আমরা দুজন। ও আমার বাবা-মা-ছোট ভাইয়ের সঙ্গে সুন্দর সম্পর্ক রেখেছে। আমারও ওর পরিবারের অনেকের সঙ্গে সুন্দর সম্পর্ক রয়ে গেছে। ইমেইলে চিঠি বিনিময় হয়; সন্তানের পারফরমেন্স পর্যালোচনা; ও আমাকে এশিওরেন্স দেয়, মিদ্রাহ’র ফিউচার ব্রাইট করার সব চেষ্টা জারি আছে; এফলুয়েন্স আছে; এসথেটিকস আছে; কোন অসুবিধা নাই আল্লার ইচ্ছায়।

সবশেষে আমি যখন জানালাম; একই নামের আরেকজনের সঙ্গে সেটল করবো; ও জানতে চাইলো কে! আমি যখন জানালাম ওর সঙ্গে সুসম্পর্ক আছে; এমন একজন আই আর-এর সিরিয়াস স্টুডেন্ট। হেসে বললো, নাহ একী করলে; আমি তো ভেবেছিলাম তোমার চেয়ে বয়সে অনেক কম ওকাম্পো কিংবা তোমার মানস-নারী বিপাশার মতো; রহস্যময়ী কেউ হবে!

ইংলিশ মিডিয়ামের বলে, পলিটিক্যাল কারেক্টনেসের বিরাট পরীক্ষা এসব। বললেই তো আর কেউ ড্যাং ড্যাং করে রাজি হয়না। কেন এতো ভালো বন্ধুত্ব থাকার পরেও এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছি; তার রিজনিং, এথিক্যাল পয়েন্ট অফ ভিউ, হোম ব্রেকিং কীনা! সস্তা সিদ্ধান্ত কীনা; হুইম কীনা! এসব দীর্ঘসময় বোঝানোর পর আই আর-এর সিরিয়াস স্টুডেন্টকে রাজি করা যায়। সে তার ভয়েস অফ এমেরিকার কাজের অফার ত্যাগ করে দক্ষিণ এশিয়ায় রয়ে যায়। কারণ জার্মানিতে পাঁচবছর থেকে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, পশ্চিমের কবরের শান্তির জীবনে ফিরে যাবো না আমি; দরকার হলে একা থাকবো; টলস্টয়ের মতো রেলস্টেশনে পড়ে মরবো। পকেটে থাকবে কুরান-বাইবেল কিংবা গীতার ছোট কপি; অথবা রবীন্দ্রনাথ কিংবা রুমির পয়ার। তবুও আমি পশ্চিমে থাকবো না। বেড়াতে তো যাই। কেউ কোনদিন বাংলাদেশের সবুজ পাসপোর্ট অবজ্ঞা করে ভিসা দেয়নি; এমন রেকর্ড তো নেই।

আমার জীবনে একই নামের আরেকজন শুনে অনেকে বললো, এই তুই এপোলো চন্দ্রযান নাকি; দুইবারই চাঁদে গেলি! এরপর থেকে আমি চন্দ্র নামের কাউকে দেখলে দূরে দূরে থাকি; পালিয়ে যাই; চন্দ্র রাশির লোক; এরপর কোন বিভ্রাট হলে আম্মা আমাকে নিশ্চিত ত্যাজ্য পুত্র করবেন।

“Moon river, wider than a mile

I’m crossing you in style some day

Oh, dream maker, you heart breaker

Wherever you’re goin’, I’m goin’ your way

Two drifters, off to see the world

There’s such a lot of world to see

We’re after the same rainbow’s end

Waitin’ ’round the bendMy huckleberry friend

Moon river and me”

Tags: মাসকাওয়াথ আহসানস্মৃতিগদ্য
Previous Post

মিরপুরের জনি হত্যা মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামী রাসেল গ্রেফতার

Next Post

তুলসীলিক্সে আইনস্টাইনের গোমর ফাঁক

Next Post
তুলসীলিক্সে আইনস্টাইনের গোমর ফাঁক

তুলসীলিক্সে আইনস্টাইনের গোমর ফাঁক

লিখুন - বলুন - তথ্য দিন।।

দেশে বিদেশে যেখানে থাকুন আপনি হ্যাঁ আপনি যুক্ত হতে পারেন সোজাকথা ডটকম পরিবারের সাথে। রিপোর্টার, লেখক কিংবা তথ্যদাতা হিসেবে থাকুন! যুক্ত হতে লিখুন/ লেখা পাঠান। লেখা পাঠানোর ঠিকানা sojakotha.com@gmail.com

সম্পাদক ও প্রকাশক (অবৈতনিক):

ব্যারিস্টার শাহ আলম ফারুক

Contact Us

221 Whitechapel Road London E1 1DE
Email : sojakotha.com@gmail.com

অনুসরণ করুন

Browse by Category

  • ENGLISH SECTION
  • কলাম
  • খেলাধুলা
  • তথ্যপ্রযুক্তি
  • নারী
  • নির্বাচিত
  • প্রবাস
  • বাংলাদেশ
  • বিনোদন
  • বিবিধ
  • বিশ্ব
  • ভিডিও
  • মতামত
  • মন্তব্য প্রতিবেদন
  • মানবাধিকার
  • যুক্তরাজ্য
  • লাইফস্টাইল
  • লিড নিউজ
  • সংবাদ শিরোনাম
  • সম্পাদকীয়
  • সাক্ষাৎকার
  • সাহিত্য
  • সোশ্যাল মিডিয়া
  • স্বাস্থ্য

Recent News

মেঘনা আলমকে আটকের ঘটনা ফ্যাসিবাদী ও স্বৈরাচারী আচরণের প্রকাশ

মেঘনা আলমকে আটকের ঘটনা ফ্যাসিবাদী ও স্বৈরাচারী আচরণের প্রকাশ

রবিবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২৫ | ৫:০৪ পূর্বাহ্ণ
নির্বাচনী অনিয়মের কারণে স্বাধীনভাবে পছন্দের প্রতিনিধি নির্বাচনের অধিকার থেকে জনগণ বঞ্চিত হচ্ছে

সরকারের মধ্যে অস্থিরতা : প্রেস উইংয়ের সংশোধিত বিজ্ঞপ্তি

রবিবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২৫ | ৪:৫১ পূর্বাহ্ণ
  • About
  • Advertise
  • Privacy & Policy
  • Contact

স্বত্ব © 2025 সোজা কথা | সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed and Maintained by Team MediaTix.

Welcome Back!

Login to your account below

Forgotten Password?

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

Log In

Add New Playlist

No Result
View All Result
  • প্রচ্ছদ
  • বাংলাদেশ
  • বিশ্ব
  • মানবাধিকার
  • খেলাধুলা
  • তথ্যপ্রযুক্তি
  • বিনোদন
  • প্রবাস
  • মতামত
  • যুক্তরাজ্য
  • স্বাস্থ্য
  • বিবিধ
    • কলাম
    • ভিডিও
    • সোশ্যাল মিডিয়া
    • লাইফস্টাইল
    • সাক্ষাৎকার

স্বত্ব © 2025 সোজা কথা | সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed and Maintained by Team MediaTix.