নিজস্ব প্রতিবেদক
ক্রসফায়ারে হত্যার চেষ্টা ও ইয়াবা দিয়ে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ এনে ফেনীতে ছাগলনাইয়া থানার সাবেক ওসি এমএম মুর্শেদসহ ১১ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুরে ফেনীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কামরুল হাসানের আদালতে মো. গিয়াস উদ্দিন দুলাল নামে এক ব্যক্তি মামলা করেন। এতে ১১ জন পুলিশ সদস্য সহ ১৩ জনকে আসামি করা হয়েছে। বাকি দুজন পুলিশের সোর্স।
মামলায় আসামিদের তালিকায় আছে- ছাগলনাইয়া থানার সাবেক ওসি বর্তমানে ডিএমপি কমিশনারের কার্যালয়ে কর্মরত এমএম মোর্শেদ, ছাগলনাইয়া থানার সাবেক এসআই বর্তমানে রাঙ্গামাটি জেলার বিলাইছড়ি থানায় কর্মরত শহীদুল ইসলাম, একই থানার সাবেক এসআই বর্তমানে চট্টগ্রামের খুলশী থানায় কর্মরত দেলোয়ার হোসেন ও এসআই খোরশেদ আলম এবং এএসআই ফিরোজ আলম, সোনাগাজী থানায় বর্তমানে কর্মরত এএসআই মাহবুবুল আলম সরকার, জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে কর্মরত কনস্টেবল সুকান্ত বড়ুয়া ও মাঈন উদ্দিন, ছাগলনাইয়া থানায় কর্মরত কনস্টেবল মো. নূরুল আমীন ও কনস্টেবল সিরাজুল ইসলাম।
ফেনী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কামরুল হাসান অভিযোগটি আমলে নিয়ে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার পুলিশ কর্মকর্তা দিয়ে তদন্ত করে আগামী ২২ নভেম্বরের মধ্যে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী জেলার সিনিয়র অ্যাডভোকেট গিয়াস উদ্দিন নান্নু।
মামলার বিবরণে জানা যায়, বাদী গিয়াস উদ্দিন দুলাল একজন পিকআপ চালক। তিনি ২০১৯ সালের ১৭ জানুয়ারি দুপুরে ফেনী সদরের কাজীরবাগে মাটি ক্যারিং করার সময় মাদক মামলার ভয় দেখিয়ে থানার আবুল হাসেম ও আবুল খায়ের নামে দুই সোর্সসহ পুলিশ সদস্যরা এসে তার কাছে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন।
এ সময় তিনি চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে বিকালে তারা তাকে একটি মাইক্রোবাসে তুলে ছাগলনাইয়ার পাঠাননগর এলাকায় ব্রাদার্স ব্রিকফিল্ডে নিয়ে যান। সেখানে ওসি মোর্শেদ এসে চোখ বেঁধে আবারও ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। কিন্তু চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তারা ক্রসফায়ারের হুমকি দেন।
পরে খবর পেয়ে মা ও বোন ১ লাখ টাকা দেয়ার কথা বললেও ওসি রাজি না হয়ে মাইক্রোবাসে করে একই উপজেলার শুভপুর ইউনিয়নের বল্লভপুর গ্রামের রাস্তায় মাথায় একটি নির্জন স্থানে নিয়ে ওসি মোর্শেদের নির্দেশে বেধড়ক পিটিয়ে তাকে হত্যার চেষ্টা চালায়।
একপর্যায় ওসি মোর্শেদ ঘটনাস্থলে সঙ্গে থাকা সুকান্ত বড়ুয়া নামে এক পুলিশ সদস্যের শটগান নিয়ে দুলালের ডান পায়ে ৩ রাউন্ড গুলি করে। এরপর তারা লাথি মেরে মৃত্যু নিশ্চিত করার চেষ্টা করে।
পরে অজ্ঞান হয়ে পড়লে মৃত্যু হয়েছে ভেবে তারা ফেনী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে কর্তব্যরত চিকিৎসক চট্টগ্রাম মেডিকেলে প্রেরণ করেন। সেখানে চিকিৎসকরা অস্ত্রোপাচার করে ডান পা কেটে ফেলেন।
সাত দিন পুলিশের হেফাজতে চট্টগ্রাম মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ফের তার বিরুদ্ধে ১৪শ’ পিস ইয়াবাসহ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মিথ্যা মামলা দায়ের করে কারাগারে প্রেরণ করা হয়।
মামলার বাদী গিয়াস উদ্দিন দুলাল বলেন, পঙ্গু হওয়ার পর থেকে অসুস্থ অবস্থায় তিনি সপরিবারে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তাই মামলা দায়েরে অনেক বিলম্ব হয়েছে। তিনি ন্যায় বিচার দাবি করেছেন ।