শিপু ফরাজী, বাংলাদেশ থেকে
২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে আজ (৪ নভেম্বর) মধ্যরাত থেকে চরফ্যাশনের মেঘনা-তেঁতুলিয়াসহ দেশের সব নদীতে আবার ইলিশ ধরতে পারবেন জেলেরা। এজন্য জাল নৌকা নিয়ে প্রস্তুত তারা। সাগরে ফিরতে ব্যস্ত সময় কাটছে এখন। শীতের আগেই ইলিশ ধরে মহাজনের ধারদেনা পরিশোধের স্বপ্ন তাদের। এবারের নিষেধাজ্ঞা সফল উল্লেখ করে ইলিশ উৎপাদন বাড়ার আশা মৎস্য বিভাগের। চরফ্যাশন উপকূলের জেলেপল্লী ঘুরে দেখা গেছে, দীর্ঘ ২২ দিনের অবসরে তারা জাল ও নৌকা মেরামতের কাজ শেষ করেছেন। এখন শুধু অপেক্ষা। মাছ ধরায় ঝাঁপিয়ে পড়বেন তারা। এ নিয়ে পরিবারগুলোতেও দেখা গেছে প্রাণচাঞ্চল্য।
বুধবার (৪ নভেম্বর) ভোর থেকে উপজেলার বিভিন্ন ঘাট ঘুরে দেখা গেল ইলিশ ধরার জন্য জেলেদের প্রস্তুতি। তেমনি একজন বেতুয়া স্লুইচ গেটের মাঝি জসিম উদ্দিন। ইলিশ শিকারে যাওয়ার জন্য ভাগিদের নিয়ে জাল নৌকা প্রস্তুতিতে ব্যস্ত তিনি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বুধবার মধ্যরাতেই সাগরের উদ্দেশ্যে রওনা দেবেন সঙ্গীদের নিয়ে।
চরফ্যাশন উপজেলার ঢালচর এলাকায় দেখা গেছে, ঘাটে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে শত শত নৌকা। বুধবার মধ্য রাতেই মাছ ধরার জন্য নৌকাগুলো সাগরে যাবে। এরই মধ্যে সব প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন জেলেরা।ঘাটে অবস্থানরত নৌকায় সহযোগীদের নিয়ে আশরাফ মাঝি। তিনি বলেন, সময় ফুরিয়ে গেছে। সব প্রস্তুতি শেষ। আল্লাহর ইচ্ছায় রাতে মাছ ধরতে নামবো। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাটগুলো সরব হয়ে উঠেছে। পুরনো জাল মেরামত আর নতুন জাল প্রস্তুতের পাশাপাশি নৌকা-ট্রলার সারিয়ে নিচ্ছেন অনেকে। মৌসুমের বাকি সময় ইলিশ ধরে ধারদেনা পরিশোধের পাশাপাশি পরিবারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনার স্বপ্ন দেখছেন। জেলেদের মতো আড়ৎ মালিকরাও দাদনের টাকা ফিরিয়ে আনা ও মোকামে ইলিশ সরবরাহের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তারা জানান, জেলেদের জালের ইলিশ জেলেদের যেমন আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনে, তেমনি এতে তারাও কিছুটা লাভবান।
মা ইলিশ রক্ষায় দেয়া নিষেধাজ্ঞা সফল হয়েছে দাবি করে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মারুফ হোসেন মিনার বলেন, এ বছর নদ-নদী ও সাগরে জেলেদের জালে প্রচুর পরিমাণে ইলিশ ধরা পড়ায় জেলেরাও স্বতঃস্ফূর্তভাবে সরকারের নিষেধাজ্ঞা মেনেছেন। তাই জেলেরা নদীতে জাল ফেলেনি। ফলে বিগত বছরের তুলনায় এ বছর আমাদের অভিযানও সফল হয়েছে। তিনি বলেন, রূপালী ইলিশসহ মৎস্য সম্পদ রক্ষায় আমরা সচেষ্ট। সামনে জাটকা নিধন অভিযান রয়েছে। নেই লক্ষ্যেও আমরা প্রচারণা চালাচ্ছি। মৎস্য অধিদপ্তর সুত্রে জানা গেছে, চরফ্যাশন উপজেলার তালিকাভুক্ত জেলে রয়েছে প্রায় ৪০ হাজার । এর মধ্যে উপজেলা মৎস্য অফিসের নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ২৫ হাজার ৬০ জন। এদের সবাইকে নিষেধাজ্ঞাকালীন সময় সরকার ২০ কেজি করে খাদ্য সহায়তা দিয়েছে সরকার।